মো: সোহেল রানা খান, মানিকগঞ্জ:
মানিকগঞ্জের সিংগাইর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. রেজাউল হকের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভনে এক নারীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়ার অভিযোগ উঠেছে। সম্পর্কের বিষয়টি জানার পর ভুক্তভোগীকে পুলিশ দিয়ে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে অভিযুক্ত এএসপির স্ত্রীর বিরুদ্ধে।
মঙ্গলবার (২ আগস্ট) বিকেলে মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপারের কাছে এ বিষয়ে মৌখিক অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী নারী। পুলিশ সুপার তাকে লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছেন।
ভুক্তভোগী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী। বর্তমানে তিনি একটি পোশাক কারখানায় সহকারী ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করছেন। তিনি সিংগাইর থানা এলাকার বাসিন্দা।
পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে ফিরে সিংগাইর থানা চত্বরে ওই নারী সাংবাদিকদের বলেন, গত বছরের শেষের দিকে তার ছোট ভাই নিখোঁজ হওয়ায় সিংগাইর থানায় একটি মিসিং ডায়েরি করতে যায় সে। সেখানে ওসির কক্ষে এএসপি রেজাউলের সঙ্গে পরিচয় হয়। এরপরদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সম্পর্ক আরেকটু গভীর হলে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে। কখনো ঢাকায়, কখনো তার কার্যালয়ের ওপরের তলার বাসায় তারা মিলিত হতো।
ওই নারী জানায়, গত রবিবার রাতে সে রেজাউলকে ফোন করে। তখন অপর প্রান্ত থেকে রেজাউলের স্ত্রী কথা বলা শুরু করে এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এরপর সোমবার সকাল ১০টার দিকে রেজাউলের বাসায় যায় সে। তখন তাকে রেজাউলের স্ত্রী ও কয়েকজন পুলিশ সদস্য তাকে মারধর করে।
পরে তাঁকে থানায় নিয়ে যায়। বিকেলে রেজাউল থানায় এসে ওসি ও তাঁর মায়ের সামনে তাঁকে ৮ আগস্ট বিয়ে করবে ও রাত সাড়ে ৮টার দিকে তাঁদের বাড়িতে যাবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়। প্রতিশ্রুতি পেয়ে ওই নারী থানা থেকে বাড়ি যায়। রাতে রেজাউল তাঁদের বাড়িতে না গিয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যান রিপন দেওয়ান ও সিংগাইর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সায়েদুল ইসলামকে পাঠায়।
তারা তাকে টাকার বিনিময়ে বিষয়টি মীমাংসার প্রস্তাব দেয়। তাঁদের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় রেজাউল হকের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নেই মর্মে একটি লিখিত মুচলেকা নেওয়া হয়। চেয়ারম্যান রিপন ও আওয়ামী লীগ নেতা সায়েদুল এএসপির পক্ষে তাঁকে একটি লিখিত দেয় যে, আগামী ৮ আগস্ট রেজাউল বিয়ে করবেন, যদি বিয়ে না করেন তবে তিনি আইনি ব্যবস্থা নিতে পারবেন।
ওই নারী জানায়, মঙ্গলবার সকাল থেকে রেজাউলের ব্যক্তিগত ও সরকারি মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তিনি মানিকগঞ্জ পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা বলতে আসেন।
অভিযোগকারী নারী বলেন, আমি একজন নারী, আমার ভবিষ্যৎ কী? ওর বউ বাচ্চা থাকা সত্ত্বেও আমার সঙ্গে কেন শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়েছে, কেন বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে? বিয়ে না করলে আমি ওর বিরুদ্ধে মামলা করবো।
সিংগাইর আওয়ামী লীগ নেতা সায়েদুল ইসলাম জানায়, ওই নারী সময় না দিয়েই সাংবাদিকসহ পুলিশ সুপাররের কাছে অভিযোগ করেছে। এখন আইনি ভাবে যা হয়, তাই হবে।
এদিকে অভিযুক্ত এএসপি রেজাউল হকের অফিসে গেলে তাঁকে পাওয়া যায়নি। তার সরকারি মোবাইল ফোনটিও বন্ধ রয়েছে। তবে সোমবার তিনি বলেছিলেন, ওই নারীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নেই। একটি ভুল বোঝাবুঝির কারণে ওই নারী তাঁর বাসায় এসেছিলেন। এ সময় তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে একটু ঝামেলা হয়।
মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ গোলাম আজাদ খান বলেন, ভুক্তভোগী ওই নারীর অভিযোগ মৌখিক ভাবে শুনেছি। আমি তাকে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করা হবে। এরপর ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
