বুধবার, ২৯শে নভেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

সাটুরিয়ায় ধ‌লেশ্বরীর ভাঙনে শতাধিক ঘর বাড়ি বিলীন

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপ‌জেলার ধলেশ্বরী নদীতে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে উপজেলার বরাইদ, তিল্লী, দিঘুলীয়া ও হরগজ ইউনিয়নের প্রায় শতাধিক ঘরবাড়ি, ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের হুমকির মুখে রয়েছে উপজেলার বরাইদ ইউনিয়নের পাতিলাপাড়া এলাকার ঐতিহ্যবাহী আবদুর রহমান খান উচ্চ বিদ্যালয় ও ফয়জুন্নেসা উচ্চ বিদ্যালয়।

ভাঙন কবলিতরা অন্যের বা আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। ভাঙনের আশঙ্কায় অনেকে ঘর সরিয়ে নিচ্ছে। নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার আ‌গে কেটে ফেলছে হুমকির মুখে থাকা গাছপালা। গত কয়েক বছর ধরে ভাঙন অব্যাহত। আগের চেয়ে ধ‌লেশ্বরী নদীতে ভাঙন আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে। আর মাত্র কয়েক মিটার নদী ভাঙলেই  আবদুর রহমান খান উচ্চ বিদ্যালয় বিলীন হয়ে যাবে।

জানা গে‌ছে, ধলেশ্বরীতে পানি বাড়ার সময় এবং পানি কমার সময় প্রতি বছর এই এলাকায় ভাঙন দেখা দেয়। গত কয়েকদিন যাবত ভাঙনের তীব্রতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. শহীদুল ইসলাম বাংলা সময়কে বলেন, গত কয়েক বছরে এই এলাকার বহু বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এবারও নদী ভাঙ্গন অব্যাহত থাকায় বাড়িঘর ভেঙে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে আবদুর রহমান খান উচ্চ বিদ্যালয়টি ভাঙনের মুখে পড়েছে।

আবদুর রহমান খান উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আরিফা আক্তার বাংলা সময়কে ব‌লেন, বিদ্যালয়টি নদীতে ভেঙে গেলে আমা‌দের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাবে। আশপাশে কোনো বিদ্যালয় নেই। এই বিদ্যালয়টি রক্ষা করতে না পারলে শত শত ছেলেমেয়ের লেখাপড়া চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে।

আবদুর রহমান খান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ আতাউর রহমান বাংলা সময়কে বলেন, কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে একমাত্র এমপিওভুক্ত স্কুল এটি। লেখাপড়া, খেলাধুলাসহ সকল ক্ষেত্রেই সুনাম রয়েছে বিদ্যালয়ের। প্রতিষ্ঠানটিতে আট শতাধিক শিক্ষার্থী ও ১৬ জন শিক্ষক রয়েছে।

বরাই‌দের ছনকা গ্রামের আবদুল জলিল বলেন, এ পর্যন্ত আমাদের প্রায় সাড়ে ২৫ শতাংশ জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। চলতি ভাঙনেই গেছে প্রায় ১০ শতাংশ জমি। এখন ভাঙনের কবলে রয়েছে ৪০ শতাংশেরও বেশি বাড়ির জমি। ঘরগুলো সরিয়ে নিতে পারলেও জমি রক্ষার কোনো সম্ভাবনা নাই। বাড়ির কিছু গাছ কেটে নেওয়ার চেষ্টা চলছে।

একই গ্রামের আবুল কালাম বাংলা সময়কে বলেন, এ বছর বন্যা আসার আগেই ভয়াবহ ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙনে ১৬০ হাত জমি বিলীন হয়েছে এ গ্রামটির। এত ভয়াবহ ভাঙন অন্য বছর হয়নি।

বরাইদ ইউনিয়নের ইউ‌পি সদস্য মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বাংলা সময়কে বলেন, মাত্র কয়েক দিনেই ভাঙনকবলিত পাঁচটি ওয়ার্ডের প্রায় ৩০ ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙনের শিকার পরিবারগুলোর বেশিরভাগ আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছে। তারা অনেক দুর্ভোগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।

সাটুরিয়া উপ‌জেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শারমিন আরা বাংলা সময়কে ব‌লেন, ভাঙন কবলিত ক‌য়েক‌টি এলাকা স‌রেজ‌মিন প‌রিদর্শন ক‌রে ক্ষ‌তিগ্রস্ত‌দের জন্য বরাদ্ধ চাওয়া হ‌য়েছে। আর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষকে বলেছি। আজ পানি উন্নয়ন বোর্ড থে‌কে ভাঙন কব‌লিত হরগজ এলাকা প‌রিমাপ ক‌রে নি‌য়ে গে‌ছে। বরাইদ ও তিল্লী এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলছে। ভাঙন‌রো‌ধে বড় ধর‌নের বরা‌দ্ধের জন্য আমরা চেষ্টা কর‌ছি।

মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাঈন উদ্দিন বলেন, আমরা ভাঙন রোধে বরাইদ ও তিল্লী এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলে কাজ করে যাচ্ছি। আরো নতুন ভাঙন কবলিত এলাকা চিহ্নিত করা হচ্ছে। পরবর্তীতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষঃ