মঙ্গলবার, ২৮শে নভেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

১৬ খাসির চামড়া ২০ টাকা!

নিজস্ব প্রতিবেদক

ময়মনসিংহে কোরবানির পশুর চামড়ার প্রকৃত দাম না পেয়ে হতাশা প্রকাশ করেছে অনেকে। কেউ কেউ চামড়া ফেলে দিয়েছেন। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিক্রেতা ও চামড়ার হকদার গরিব-দুঃখীরা।ঈদুল আজহা এলে মানুষের বাড়ি বাড়ি ঘুরে চামড়ার টাকা সংগ্রহ করেন ময়মনসিংহ পৌর শহরের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের মেরী আগলা কান্দাপাড়া এলাকার সুমি বেগম (ছদ্মনাম)।

তিনি বলেন, যারা কোরবানি দিয়েছে সকাল থেকে তাদের বাড়িতে বাড়িতে ঘুরেছি। প্রতি বছর ২০০-৩০০ টাকা পেলেও এবার ৫০ টাকার মতো পেয়েছি। ক্ষোভ প্রকাশ করে সুমি বেগম বলেন, ‘গরিবের হক মেরে খাওয়ার ফল ভালো হবে না’।একই এলাকার মাহেরন বিবি (ছদ্মনাম) বলেন, ‘প্রতি বছরই মানুষের বাড়ি বাড়ি ঘুরে টাকা সংগ্রহ করি। এইবার যার বাড়িতেই গেছি সবাই বলে চামড়ার দাম কম। তাই, ব্যবসায়ীদের চামড়া বিনামূল্যে দিয়ে দিছে। আমার মতো গরিব মানুষের হকের টাকা মাইরা খাইয়া ঠিক হইতাছে না। গরিবের হক মেরে খাওয়ার বিচার আল্লাহ করবো।’

একই ওয়ার্ডের খালপাড় এলাকার একটি বাড়িতে ১৬টি খাসি ও দুটি গরু কোরবানি করা হয়। কিন্তু দিন গড়িয়ে সন্ধ্যা হলেও চামড়ার ক্রেতা পাওয়া যায়নি। পরে স্থানীয় ফড়িয়া ব্যবসায়ী মইজউদ্দিনকে ডেকে এনে খাসির চামড়াগুলো দিয়ে দেওয়া হয়। তিনি বাজারে গিয়ে ১৬টি খাসির চামড়া মাত্র ২০ টাকা বিক্রি করেন।

মইজউদ্দিন বলেন, ‘১৬টি খাসির চামড়া মাত্র ২০ টাকায় বিক্রি করতে পেরেছি। এর বেশি কেউ দিতে চাননি। পরে ওই ২০ টাকা চামড়ার মালিককে বুঝিয়ে দিয়েছি।’সরকার দাম নির্ধারণ করে দিলেও আড়তদাররা সেই দাম দিচ্ছেন না। তাই কম মূল্যে চামড়া কিনতে হচ্ছে বলে জানান মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী হাফিজুর রহমান।চামড়া ব্যবসায়ী শেখ মাসুম বলেন, ‘প্রতি বছর সরকার নির্ধারিত দামে চামড়া বিক্রির কথা থাকলেও ট্যানানি মালিকরা সিন্ডিকেট করে দাম কমিয়ে দেন। ফলে আমরা লোকসানের মুখে পড়ি। তাই আমরা বেশি দামে চামড়া কিনতে পারি না।’

ব্যবসায়ী মো. খসরু বলেন, ‘গতকাল প্রতি বস্তা লবণ ছিল ১ হাজার ৫০ টাকা। আজ তা কিনতে হচ্ছে ১৩শ টাকা। এ বছর প্রায় দুই হাজার চামড়া কিনেছি। একটি চামড়ায় ১০-১২ কেজি লবণ লাগে। চামড়ায় লবণ দেওয়ার আগে প্রসেস করতে আরও ২০ টাকা খরচ হয়। আন্তর্জাতিক বাজারেও চামড়ার চাহিদা কম। তাই সবমিলিয়ে ব্যবসাটা কোনোভাবেই ভালো হচ্ছে না।’মহব্বত সরকার নামের একজন বলেন, ‘৮৮ হাজার টাকায় গরু কোরবানি করেছি। ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা চামড়ার দাম বলে ২২০ টাকা। পরে সেটি মাদরাসায় দান করে দিয়েছি।’জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় কোরবানি পশুর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৭০ হাজার। সিটি করপোরেশনে কোরবানি পশু জবাইয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল প্রায় ৩৫ হাজার।রোববার (১০ জুলাই) দুপুর থেকে ময়মনসিংহ নগরীর চামড়া গুদাম এলাকায় দেখা যায়, ফড়িয়ারা বিভিন্ন জায়গা থেকে রিকশা, ভ্যান এবং পিকআপে করে চামড়া নিয়ে এসে বিক্রি করছেন। ঈদের দ্বিতীয় দিন সকালেও চামড়া নিয়ে এসে কিছু ফড়িয়াকে বিক্রি করতে দেখা গেছে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. ওয়াহেদুল আলম বলেন, ‘জেলায় কোরবানি পশু জবাইয়ের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার। যা গত বছরের তুলনায় ৪০ হাজার বেশি। এসব কোরবানি পশুর চামড়া সুন্দরভাবে সংরক্ষণের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ যাতে ন্যায্য দাম পান সে বিষয়ে জেলা প্রশাসক সংশ্লিষ্টদের নিয়ে মিটিং করেছেন। দাম নিশ্চিত করতে আমরাও নজরদারি করছি।’ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইউসুফ আলী বলেন, সাধারণ মানুষ যাতে চামড়ার ন্যায্য দাম পান সে বিষয়ে আমরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেছি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষঃ