সোমবার, ৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

চায়ের রাজ্যে ছোট্ট ‘সাজেক’

তিমির বনিক, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:
চোখ খুললেই শুধু সবুজ আর সবুজ। লাল টিনের চাল, চারিদিকে নাই বেড়া। আকাশের নীল এসে যেন দিগন্ত ছুঁয়েছে। যতদূর চোখ যায়, চারদিকে ছোট-বড় সবুজে ঘেরা পাহাড়। বিভিন্ন জাতের রঙ বেরঙের ফুল এবং লহর ফলের সমাহার মন কেড়ে নেয়। তারই মাঝখানে লাল সবুজের পতাকার মতো লাল বৃত্তের যায়গাটা পূরণ করেছে লাল টিনের গোলাকার বেড়াবিহীন একটি ঘর। চায়ের দেশে এ যেন ছোট্ট একটি সাজেক।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা মেলে মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার হিংগাজিয়া চা-বাগানের ১০ নম্বরে গিয়ে দেখা যায় এমন মনমুগ্ধ দৃশ্য। চায়ের সমাহারে উঁচু পাহাড়ের এক প্রান্তে কাঠ এবং লাল টিন দিয়ে তৈরি একটি ঘর। নীল আকাশের নিচে এই ঘরের মধ্যে বসে প্রকৃতির অপুর্ব রূপ দেখা যায়।
সেখান থেকে ছোট-বড় সবুজ পাহাড় দেখতে বেশ ভালোই লাগে। শীতের সময়ে কুয়াশায় ঘেরা একটি থেকে আরেকটি পাহাড়ের মাঝে যেন আটকে আছে সাদা মেঘের ভেলা। এ যেন এক স্বপ্নের দেশ! স্নিগ্ধ হিমেল হাওয়া, পশ্চিমে রক্তিম আকাশ আর পাহাড়ের নির্মল সবুজ মিলেমিশে একাকার। পাহাড় থেকে ভেসে আসে নানান প্রজাতির পাখির কোলাহল। এই সৌন্দর্যের রাজ্যে না হারিয়ে উপায় নেই। এখানে কখন যে সময় গড়িয়ে যায় তার হিসাব থাকেনা। হিসাব রাখার দরকারও পড়ে না। প্রথমবার গিয়ে মনে হবে অনন্তকাল থাকা যাবে এমন পরিবেশে।
এখন বৃষ্টির মধ্যে যেন এক পাহাড়ের গা ভিজে ঝড়িয়ে পড়ছে পানি। বৃষ্টির শব্দ যেন কানের মধ্যে বলে দিয়ে যায় এখানেই শেষ নয় শেষের কোন কমতি নেই।কি অপরূপ সৌন্দর্য নিজ চোখে না দেখে বিশ্বাস হবার নয়।
চা-বাগানের অপরূপ সৌন্দর্য্যের ভিতর দিয়ে যেতে হয়। বাগানের ভিতর উচু টিলায় চা শ্রমিকরা চা পাতা তুলতে দেখা যায়। দেখা যায় ঝরা পাতায় রাবার বাগানের অপরুপ দৃশ্য। রাস্তায় পাওয়া যায় বানরের পাল, গাছের এক ডাল থেকে আরেক ডালে লাফাচ্ছে। বানর (মা) তার ছোট বাচ্চাকে পিঠের উপর বসিয়ে রাস্তা দিয়ে যাওয়া মানুষকে দেখে ভয়ে পালিয়ে যায়। এ যেন সন্তানের প্রতি মায়ের ভালোবাসার এক বাস্তব উদাহরণ।
সবুজের গালিচা বিছানো চা বাগানের অপরূপ দৃশ্য প্রকৃতিপ্রেমী যে কারো মনকে আন্দোলিত করবে। সবুজ চায়ের ঘ্রাণ মনটাকে প্রফুল্য করে তুলবে। তখন মনের অজান্তেই গুনগুনিয়ে উঠবেন ‘ও পাহাড়িয়া মন, ও বাগানিয়া মন’।
কথা হয় জেলা শহর থেকে ঘুরতে আসা রাজন কুমারের সাথে। তিনি জানান, পৌষ সংক্রান্তির ছুটি পেয়ে বন্ধুদের সাথে এসেছি এখানে। এখানকার দৃশ্য দেখে মনে হয় চায়ের দেশে এটি একটি ছোট্ট সাজেক। শীতের সময় উচু পাহাড়ের চুড়ায় বসে শীতল বাতাসের মাঝে এক কাপ চা থাকলে আড্ডাটা বেশ ভালোই জমে উঠতো। প্রাকৃতিক মনোমুগ্ধকর পরিবেশে আসলে সুস্থ-সুন্দর দেহ-মন গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করবে।
কালের বিবর্তনে আস্তে আস্তে হারিয়ে যাচ্ছে প্রাকৃতিক মুগ্ধকর স্থানগুলো। পাহাড়, টিলা, বন কেটে উজাড় করা হচ্ছে। এইসব জায়গাগুলোকে টিকিয়ে রাখতে আমাদের তৎপর হতে হবে। নিয়মিত বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করতে হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষঃ