সোমবার, ৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

পলাশে শত বছরের পুরনো লক্ষণ সাহার জমিদার বাড়ি

নরসিংদী প্রতিনিধি

নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ডাংগায় মোঘল আমলের শত বছরের পুরনো জমিদার বাড়ি আজও তার আপন মহিমায় দাঁড়িয়ে আছে। মনোমুগ্ধকর কারুকাজ সমৃদ্ধ প্রকৃতির অপরুপ সাজে সজ্জিত জমিদার বাড়িটি এক নজর দেখার জন্য উপজেলাসহ দেশের অন্যান্য জেলার বিনোদনপ্রেমী মানুষ ছুটে আসে এখানে। বাড়িটির কারুকাজ মণ্ডিত শৈল্পিক ছোঁয়া বিনোদনপ্রেমীদের পাশাপাশি পর্যটকদের মন আকৃষ্ট করে।

চোখ ধাঁধানো জমিদার বাড়িটি নির্মাণ করেন মোগল আমলের লক্ষণ সাহা নামে এক জমিদার। এই বাড়িটিতে ২৪টি কক্ষ রয়েছে। পাশেই রয়েছে ছোট্ট আরেকটি কারুকার্য খচিত নান্দনিক মন্দির, অর্ধনির্মিত একটি প্রাচীন বাড়ি। পূজা করার ৪টি পূজা মন্ডব থাকলেও বর্তমানে ১টি বড় আকারের পূজা মন্ডব রয়েছে। বাড়িটিতে বিভিন্ন রকমের গাছের বাগানও রয়েছে।

চারপাশে উঁচু প্রাচীর ও মোঘল আমলের তৈরি করা সুন্দর একটি পুকুরের পাশাপাশি রয়েছে সান বাঁধানো ঘাট। এই বাড়িটি বর্তমান মালিকানায় রয়েছে আহম্মদ আলী। তিনি পেশায় একজন উকিল। তাই বাড়িটি এখন উকিলের বাড়ি নামে বেশি পরিচিত।

এখানে ঘুরতে আসা নরসিংদীর মোশাররফ হোসেন বাবু জানান, জমিদার বাড়ির সৌন্দর্য ও শৈল্পিক কারুকার্যখচিত দৃশ্য দেখে অনেক ভালো লাগলো। চারপাশের সবুজ প্রকৃতির নয়নাভিরাম ছোঁয়া উপভোগ করার মতো।

বাড়িটির ইতিহাস ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই এলাকার জমিদার লক্ষণ সাহার নাতি বৌদ্ধ নারায়ণ সাহা জমিদারের রেখে যাওয়া সমস্ত সম্পত্তি উকিল আহম্মদ আলীর কাছে বিক্রি করে নারায়ণগঞ্জে চলে আসেন। পরে আহম্মদ আলীর স্ত্রীর নামের সাথে মিল রেখে জমিদার বাড়ির নাম দেওয়া হয় জামিনা মহল।

আরও জানা যায়, এই বাড়ির সম্পত্তিটি ছিল দেবোত্তর।শতবছর আগে ভারতবর্ষে এই এলাকাটি ছিল দেবোত্তর হিসেবে। দেবোত্তর জমি হলে জমিদারকে খাজনা দেওয়ার নিয়ম ছিল না। জমিদার লক্ষণ সাহার ৩ ছেলে পেরিমোহন সাহা, নিকুঞ্জ সাহা ও বঙ্কু সাহা। লক্ষণ সাহা মারা যাওয়ার পর তিন ভাই এই সম্পত্তি ভোগ করতে থাকেন। যখন ভারত ভাগ হয় তখন বঙ্কু সাহা এখান থেকে ভারতে চলে যান।

পরবর্তীকালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার কিছু পূর্বে নিকুঞ্জ সাহাও ভারতে চলে যান। সেই সময়টাতে জমিদারের ছোট ছেলে পেরিমোহন সাহা এই সম্পত্তির ভোগ করতে থাকেন। পেরিমোহন সাহা মারা যাওয়ার পর তার ছেলে বৌদ্ধ নারায়ণ এই দেবোত্তার সম্পত্তিটি বিক্রি করে ফেলেন। দেবোত্তরকৃত এই সম্পত্তিটি বিক্রি করার পর স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় ট্রাস্ট নামে একটি সংগঠন আদালতে মামলা দায়ের করেন। যা এখনো চলমান। মামলা জটিলতা ও দেখভাল করার অভাবেই বর্তমানে লক্ষ্মণ সাহার এই জমিদার বাড়িটি অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে রয়েছে।

‌‌

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষঃ