শনিবার, ১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ভূয়া পুলিশ ক্লিয়ারেন্সে অনেকেই প্রবাসে

তিমির বনিক,মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:
পুলিশ ক্লিয়ারেন্স ৬৭৮টি ভূয়া! বিদেশ ও পাড়ি জমিয়েছেন।
কারো বাড়ি মৌলভীবাজার জেলায় নয়। অথচ এই জেলার সদর ও কমলগঞ্জের দুটি থানার ঠিকানা ব্যবহার করে ৬৭৮ জনকে শ্রমিক হিসেবে বিদেশে যেতে ‘পুলিশ ক্লিয়ারেন্স’ দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) তদন্তেও উঠে এসেছে। এরইমধ্যে অনেকেই মধ্যপ্রাচ্যের নানা দেশে পাড়িও জমিয়েছেন।

সিআইডির তদন্তে দুই থানার তিন পুলিশ সদস্য এই জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত বলে প্রমানিত হয়েছে। জালিয়াতিতে জড়িতরা হলেন, মৌলভীবাজার সদর থানার উপ-সহকারী পরিদর্শক (এএসআই) কোরবান আলী, কনস্টেবল আল মামুন এবং কমলগঞ্জ থানার কনস্টেবল (কম্পিউটার অপারেটর) লিটন বিশ্বাস।
সিআইডির অনুসন্ধান তথ্য সূত্র বলছে, ২০২০ইং সালের ১লা জুন থেকে ২০২১ সালের ৩১শে জানুয়ারির মধ্যে মৌলভীবাজারের দুই থানা থেকে ৬৭৮টি ভুয়া প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৫০৩টি প্রতিবেদন দিয়েছে সদর থানা। আর কমলগঞ্জ থানা দিয়েছে ১৭৫টি।
সিআইডির তদন্তে সূত্রের বরাতে জানা গেছে, সদর থানার কম্পিউটার অপারেটর আল মামুন অনলাইনের আবেদনগুলো প্রিন্ট করে থানার ওসির কাছে উপস্থাপন করতেন। তখন ওসি তাঁর অধীনস্থ ব্যক্তিদের তদন্তের দায়িত্ব দিতেন। তবে আল মামুন নিজেই গোপনে থানার এসআই আবু সায়েম মো. আব্দুর রহমানের পুলিশ আইডি নম্বর ব্যবহার করে যাচাই প্রতিবেদন তৈরি করতেন। পরে এএসআই (মুন্সি) কোরবান সেগুলো ওসির সামনে হাজির করতেন। ওসি স্বাক্ষর করলে প্রতিবেদনগুলো পুলিশের বিশেষ শাখায় পাঠিয়ে দেওয়া হতো। একই কাজ করেন কমলগঞ্জ থানার লিটন বিশ্বাস। তিনি থানার এসআই আব্দুস শহীদ ও ফজলে এলাহীর পুলিশ আইডি নম্বর ব্যবহার করে ভুয়া যাচাই প্রতিবেদন তৈরি করতেন।
তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক প্রবীর কুমার ঘোষ জানান, ওই পুলিশ সদস্যরা একটি দালাল চক্রের সঙ্গে যোগসাজশে জালিয়াতি করে এসব পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের ব্যবস্থা করেছিলেন। এর জন্য প্রত্যেক বিদেশগামীর কাছ থেকে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা করে নেওয়া হয়েছিল।
সদর থানার এসআই আব্দুর রহমান সিআইডিকে বলেন, আবেদনগুলোর কোনোটিই তিনি যাচাই করেননি। ওসির নির্দেশে এএসআই কোরবান ও কনস্টেবল আল মামুন তাঁর আইডি ব্যবহার করে এসব প্রতিবেদন দিয়েছেন। আর এএসআই কোরবান দাবি করেন, ওসি সাহেবের নির্দেশের বাইরে তাঁর কাজ করার কোনো সুযোগ নেই।
সদর থানার ওসি ইয়াছিনুল হক বলেন, ভুলত্রুটি যদি মানুষের থাকে, একটা বা দুটো যাচাই-বাছাই প্রতিবেদনের ক্ষেত্রে হতে পারে। প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সিআইডির তদন্তে যেটা এসেছে, দু-একটা ঘটনায় নিশ্চয়ই এমন হইছে।
এদিকে কমলগঞ্জ থানার এসআই ফজলে এলাহীও জানান, তিনি কোনো যাচাই প্রতিবেদন তৈরি করেননি। তৎকালীন ওসি আরিফুর রহমান বলেন, থানার কম্পিউটার অপারেটর লিটনের উপস্থাপন করা কাগজে সরল বিশ্বাসে তিনি স্বাক্ষর করেন। মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, প্রতিবেদনে যদি ওসিদের স্বাক্ষর থাকে, তাহলে তাঁদের দায় এড়ানোর সুযোগ নেই।
প্রসঙ্গত; শ্রমিক হিসেবে বিদেশে যেতে পাসপোর্টধারীদের ‘পুলিশ ক্লিয়ারেন্স’ দরকার হয়। এর জন্য অনলাইনে আবেদন করতে হয়। আবেদনটি প্রথমে পুলিশের বিশেষ শাখায় (এসবি)তে যায়। সেখান থেকে তথ্য যাচাইয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট থানায় পাঠানো হয়। যাচাই করে থানায় প্রতিবেদন দিলে তার উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত দেয় পুলিশের বিশেষ শাখা।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষঃ