সোমবার, ৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

যে হাটে শ্রম বিক্রি হয়

ওয়াসিম উদ্দিন সোহাগ, তাড়াইল

কিশোরগঞ্জের তাড়াইলে কাক ডাকা ভোরেই দেখা মিলে একদল শ্রমজীবী মানুষের। যারা চুক্তিতে শ্রম বিক্রি করতে জড়ো হয় হাজী গোলাম হোসেন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে। আধুনিক এ ‍যুগেও মানুষ বিক্রির হাটের কথা শুনে অবাক লাগলেও বাস্তবে এমনি হাট রয়েছে এ উপজেলায়। যেখানে সকাল ৬ টা থেকে ৮ টা পর্যন্ত বেচা-বিক্রি চলে। চুক্তিতে মিললেই শ্রমিক চলে যায় মালিকের কাজে। কিন্তু খটকা লাগল অন্য কোথাও! মালিক এবং শ্রমিকের মধ্যে পণ্যের মতো দর-কষাকষি চলে। পণ্যের মতো বিক্রি হওয়া শ্রমজীবী এসব মানুষকে নিয়ে করানো যাবে যে কোন কাজ। নিয়ে যাওয়া যাবে যে কোন জায়গায়। তবে অধিকাংশ শ্রমিকদের দিয়েই কৃষি কাজ করানো হয় বলে জানা গেছে শ্রমিকদের সাথে কথা বলে। সারাদিন শ্রম বিক্রি করে বিকেল বেলায় প্রাপ্ত টাকার চাল-ডাল কিনে বাড়ি ফিরে শ্রমজীবী মানুষ। এর মাধ্যমেই পরিবারের সদস্যরা ক্ষুধার জ্বালা থেকে পরিত্রাণ পায়। কাজ না পেলেই পরিবারে নেমে আসে ঘোর অমানিশা। খেয়ে না খেয়ে দিন কাটে। অপেক্ষা পরবর্তী দিনের জন্য। গতকাল সকালে শ্রমিকদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

শ্রমিক হাট ঘুরে দেখা যায়, নিজেদের প্রদর্শন করার জন্য রাস্তার দুইপাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকে। দেখে মনে হবে কোন মানববন্ধনের প্রস্তুতি। কিংবা কোন রাজনৈতিক অনুষ্ঠানের জন্য জড়ো হওয়া জনসাধারণ। কিন্তু বাস্তবে এমন কিছু না। তারা পেটের দায়ে হাটে উঠেছেন। অপেক্ষা খদ্দেরের। এক বা একাধিক দিনের জন্য শ্রমিক হিসাবে চুক্তিবদ্ধ হয় তারা। খদ্দেরের আশায় পথপানে চেয়ে থাকে। কখন কোন গৃহস্ত, ঠিকাদার অথবা ধনাঢ্য ব্যক্তি আসবে। এসে আলোচনা বা চুক্তি করে নিয়ে যাবে কাজের জন্য। আর সেই শ্রমের টাকায় চলবে তাদের সংসার।তাড়াইলের এই হাটটি স্বাভাবিকভাবেই অনেকের কাছে ব্যতিক্রম মনে হয়।

শ্রমজীবী অনেকের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, কাজের সন্ধানে প্রতিদিন আসলেও নিয়মিত কাজ মিলে না। ফলে কাজ না পেয়ে প্রায় দিনই বাড়ি ফিরে যেতে হয়। তাদের এমন ফেরা দেখে বাড়ির সদস্যরা মেনে নিতে পারে না। তাদের চেহারা মলিন হয়ে যায়। কেননা কাজ না পেলে তাদের চুলায় আগুন জ্বলে না। শ্রমিকরা বলেন, কাজের জন্য তারা প্রস্তুত থাকলেও সবসময় কাজ মিলে না। এ কঠিন বাস্তবতা মেনেই তারা এ হাটে আসেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শ্রমিক বলেন, আজ তিনদিন যাবত ঘুরে যাচ্ছি। কেউ কাজের জন্য নেয়নি। রোজগার ছাড়া কি করে তিনটা দিন চলে?  সংসার বড়ই অভাব অনটনের মধ্যে চলছে। অন্য এক শ্রমিক বুক টান করে ছবি তোলার জন্য বলে। সাংবাদিক ভাই ছবি তুলে পত্রিকায় দেন যাতে আমাদের কাজ করার একটা বিহিত হয়। আমরা কাজ করে খেতে চাই।

এ হাটে যুবক, মধ্য বয়সি এমনকি বৃদ্ধরাও আসেন। তাদের চাওয়া শুধুমাত্র তিন বেলা ডাল-ভাত। এর বেশি তারা আশা করে না। এসব শ্রমিকরা সাহায্য চায় না। চায় কাজ। তবে স্থায়ী কাজের প্রত্যাশা করেন তারা। স্থায়ী কাজের জন্য সরকার এবং শিল্পপতিদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষঃ